সায়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ
তাওবা সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে নির্দেশনা : ইসলামি শরিয়ার ভাষ্য মতে, বান্দা তাওবা করলে আল্লাহ তা গ্রহণ করেন। অবশ্য সেটা হতে হবে আন্তরিক ও পরিশুদ্ধ অন্তকরণে। তাই মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তাওবা সম্পর্ক আলোকপাত করেছেন। তিনি তাওবার ধরন, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেছেন যা সঠিকভাবে অনুধাবন করে বাস্তবজীবনে রূপায়িত করা অতীব জরুরি।
সাইয়েদুল ইস্তেগফারের ফজিলত
সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার অনেক ফজিলত রয়েছে । রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সাইয়েদুল ইস্তেগফার সকালে পাঠ করে সারাদিনের কোন অংশে মারা যায় তবে সে জান্নাতি হবে। রাতে পাঠ করে মারা গেলেও সে জান্নাতি হবে।
অর্থাৎ সাইয়েদুল ইস্তেগফার সকালে বিকালে দুই বার পাঠ করলে সারা দিনে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে থাকে তবে সে জান্নাতের লাভ করবে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস থেকে বোঝা যায় সাইয়েদুল ইস্তেগফার পাঠের ফজিলত কত বেশি।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার ছবি
সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার অর্থ
সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার অর্থ ৷ আরবিতে سيد الاستغفار ৷ শাব্দিক অর্থঃ এখানে দুটো শব্দ মিলে একটি বাক্য হয়েছে ৷
সাইয়্যেদ অর্থ নেতা বা সরদার ৷ শ্রেষ্ঠও হয় ৷ ইস্তেগফার অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা ৷ দুটো মিলে অর্থ দাঁড়ায় ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দুআ ৷
সাইয়েদুল ইস্তেগফার আরবি
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْت
সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি ৷ ওয়া আনা আবদুকা। ওয়া আনা আলা আহদিকা। ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতা’তু। আউজু বিকা মিন শাররি মা-সানা’তু। আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা। ওয়া আবুয়ু লাকা বি জাম্বি। ফাগফিরলী। ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনবা ইল্লা আনতা ৷
সাইয়েদুল ইস্তেগফারের বাংলা অর্থ
হে আল্লাহ! একমাত্র আপনিই আমাদের প্রতিপালক। আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আপনিই আমার স্রষ্টা এবং আমি আপনার দাস। আমি আপনার সঙ্গে কৃত ওয়াদা ও অঙ্গীকারের ওপর সাধ্যানুযায়ী অটল ও অবিচল আছি। আমি আমার কৃতকর্মের সব অনিষ্ট হতে আপানার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমার উওর আপনার দানকৃত সব নেয়ামত স্বীকার করছি। আমি আমার সব গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। কেননা, আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।
নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকালে সায়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠ করবে, যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সন্ধ্যায় সায়্যিদুল ইস্তিগফার পড়ে সে যদি সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর সে যদি সন্ধ্যা হওয়ার আগে মারা যায় তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার ছবি
সাইয়েদুল ইস্তেগফার হাদীস
شَدَّادُ بْنُ أَوْسٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم سَيِّدُ الِاسْتِغْفَارِ أَنْ تَقُولَ اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّه“ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ قَالَ وَمَنْ قَالَهَا مِنْ النَّهَارِ مُوقِنًا بِهَا فَمَاتَ مِنْ يَوْمِه„ قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَمَنْ قَالَهَا مِنْ اللَّيْلِ وَهُوَ مُوقِنٌ بِهَا فَمَاتَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِ فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ.
শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) থেকে বর্ণিত :
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু’আ পড়া- “হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নি’য়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।”
যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইসতিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু’আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৫৪)
পরিশুদ্ধ ও তাওবার নির্দেশ
মুসলমানের বৈশিষ্ট্য হলো, কদাচিৎ তার দ্বারা পাপের কাজ সংগঠিত হলে সে তাওবা না করা পর্যন্ত মানসিকভাবে প্রশান্ত হতে পারে না। আর তাওবার ক্ষেত্রে আত্মার বিশুদ্ধতাই প্রধান বিষয়। ইসলামি শরিয়ত মতে- আন্তরিক তাওবাই আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করে থাকেন। আর এ কারণেই মহান রাব্বুল আলামিন মানুষকে পরিশুদ্ধ তাওবা করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তাইতো প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, বিশুদ্ধ তাওবা। (সূরা তাহরীম : ৮)
তাওবাকারীর প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা
মহান আল্লাহ তাআলা তাওবাকারীদের অত্যন্ত ভালোবাসেন। বান্দা যখন তার অপরাধের জন্য অনুশোচনার অনলে দগ্ধ হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন তিনি অত্যন্ত খুশী হন। তাছাড়া গুনাহগার বান্দা যখন তাওবা করে তখন আল্লাহ তাআলা অত্যাধিক খুশী হন। তাই আল্লাহ তাওবাকারীকে ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নেন এবং সকল অপরাধ মার্জনা করে দেন। তাই তো আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা বাকারা-২২২)।
সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার ভিডিও
তাওবা আল্লাহর নির্দেশ
মানুষ আল্লাহর সেরা সৃষ্টি। শুধু সেরা সৃষ্টিই নয় বরং সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি হলো মানুষ। আল্লাহ মানবজাতিকে অনেক ভালোবেসে তার দায়িত্ব বা গোলামি করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। বিশ্বনবি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ ওইসব মানুষ দেখতে চান, যারা গুনাহ করে আবার ক্ষমা চায়। অন্যায় করার পর তাঁর কাছে ফিরে আসার আকুতি জানায়। আল্লাহ তাআলাও ক্ষমাপ্রার্থনাকারী মানুষদের ক্ষমা করে দেন। মানুষ যখনই কোনো অন্যায় করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন মর্মে ঘোষণা করেন, ‘আর যে ব্যক্তি খারাপ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি জুলুম করবে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা নিসা-১১০)
আল্লাহ আরো বলেন, ‘তবে একথা জেনো রাখো, আল্লাহর কাছে তাওবা কবুল হওয়ার অধিকার একমাত্র তারাই লাভ করে যারা অজ্ঞাতার কারণে কোন মন্দ কাজ করে বসে এবং তারপর অতিদ্রুত তাওবা করে।’ (সূরা নিসা-১৭)
তাওবা পার্থিব জীবনে প্রশান্তির বাহক
তাওবা শুধুমাত্র বান্দার পারলৌকিক জীবনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে না। বরং পার্থিব জীবনে সুখ শান্তি ও প্রশান্তির অন্যতম বাহক হিসেবে কাজ করে। তাওবা, ইস্তিগফার শুধু পরকালীন শাস্তি থেকে মুক্তি দেয় তা নয়, বরং পার্থিব জীবনেও বয়ে আনে সুখ-সমৃদ্ধি। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাওবা কর, তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত সুখ-শান্তি দিবেন। (সুরা হুদ : ৩)
তাওবাকারী সফলকাম
তাওবা আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। কেননা তাওবার শর্তসমূহ পূরণ করে তাওবা করলে গুনাহ করার পূর্বে আল্লাহর কাছে বান্দার যে মর্যাদা ছিল। তাওবা করার পর তার মর্যাদা পূর্বাপেক্ষা আর ও বাড়ে। তাছাড়া পাপ থেকে পরিত্রাণের জন্য তাওবা করা ওয়াজিব এবং যারা তা করবে মহান রাব্বুল আলামিন তাদেরকে সফল হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ এরশাদ করেন- ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। [সূরা আন নূর : ৩১] মহান আল্লাহ আরো ও বলেন, ‘আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তারকাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাওবা কর। (সূরা হুদ : ৩)
আরও পড়ুন,